খোলা আকাশের নিচেই শিক্ষা কার্যক্রম
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার আঙ্গারীদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় খোলা আকাশের নিচেই শিক্ষা গ্রহণ করছে ছাত্র-ছাত্রীরা। এতে চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
নতুন করে ভবন নির্মাণ না হওয়ায় শিক্ষকরা বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে কোমলমতি এসব শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৪ সালের বন্যার সময় নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বিদ্যালয় ভবনটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পর বিদ্যালয়টি স্থাপনের জায়গা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে জটিলতা দেখা দেয়। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে এ জটিলতা নিরসন হলেও অদ্যাবধি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করছে কিছু শিক্ষার্থী। মাঠের পাশে একটি টিনের চালা থাকলেও কোনো দেয়াল নেই।
শিক্ষকরা জানান, খোলা জায়গায় পড়াতে সব মৌসুমেই অসুবিধা হয়। শীতে ঠান্ডা বাতাস, গরমে খাঁখাঁ রোদ। আর বর্ষায় বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। ফলে পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শেফালী খাতুন বলে, সারা বছর রোদে পুড়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হয়। আমাদের খুব কষ্ট হয়। আকাশে মেঘ হলে স্কুল ছুটি হয়ে যায়, স্যারেরা বলে, যাও, আজ তোমাদেও ছুটি।
অভিভাবক আরশাদ আলী বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা দুই বছর ধরে রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে শীতের মধ্যে ফাঁকা জাগায় ক্লাস করছে। অনেক দিন হয়ে গেল এখনো কোনো নতুন ঘর বানাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘শুনি, সরকার নাকি কত জাগায় কত কিছু দিচ্ছে। কিন্তু এখানকার ঘরটা কেন বানাচ্ছে না’?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহমিনা বেগম বলেন, দুই বছর আগে নদী ভাঙনে বিদ্যালয়টির ভবন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তখন থেকে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের
নিচে পাঠদান করাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ২ বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে বার বার ধরনা দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। বর্তমানে স্কুলে একটি ৪ কক্ষ বিশিষ্ট ৬০ হাত গৃহ নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
শিক্ষার্থী কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে এ বিদ্যালয়ে আরও বেশি শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু ক্লাস করতে কষ্ট হওয়ায় অনেকে আশপাশের বিদ্যালয়ে চলে গেছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সুরুজ মিয়া বলেন, সরকারি অবহেলার কারণে
বিদ্যালয়টির করুণ দশা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের দুর্দশার শেষ নেই। ঝড়-বৃষ্টি এলে শিক্ষকদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে স্কুল ছুটি দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ভবন না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করাতে শিক্ষকরা বাধ্য হচ্ছেন।
ঐ বিদ্যালয়ের দায়িত্বরত ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার শহীদুল ইসলাম শিক্ষার্থীদেও দুঃর্দশার কথা স্বীকার করে বলেন, খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানোর কারণে মান সম্মত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি টিন ঘর নির্মাণের জন্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের হাতে আছে ৮০ হাজার টাকা। বাকী টাকার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে।
প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি